, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


রাবির 'অথরিটি' নির্বাচনে বড় দুইদলের ফাটল 

  • আপলোড সময় : ১১-১২-২০২৩ ০২:৪৮:২৮ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-১২-২০২৩ ০২:৪৮:২৮ অপরাহ্ন
রাবির 'অথরিটি' নির্বাচনে বড় দুইদলের ফাটল 
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক সমিতি ও বিভিন্ন অথরিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীপন্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের হলুদ প্যানেল ও বিএনপি-জামায়াত-পন্থী শিক্ষকদের সাদা প্যানেলের মধ্যে বড় ধরণের ফাটল দেখা দিয়েছে। 

একদিকে হলুদ প্যানেলের মধ্য থেকে বড় একটি অংশ বিভক্ত হয়ে আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করবেন এমন গুঞ্জন উঠেছিল ক্যাম্পাস জুড়ে। তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় আলাদা প্যানেল প্রকাশ না করে হলুদ প্যানেল থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন শিক্ষকদের একাংশ।

অন্যদিকে আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপ সমর্থিত সাদা প্যানেলের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ফাটল। এ সংগঠনের একাংশের শিক্ষকরা নির্বাচন অংশ নিলেও আরেকটি অংশ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে তুলে ধরে নির্বাচন বর্জন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিন্ডিকেট সদস্য  নির্বাচনে ৫ টি পদের বিপরীতে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ৪জন শিক্ষক নির্বাচন করছেন। তারা হলেন, প্রাধ্যক্ষ ক্যাটাগরিতে ড. মোছা. হাসনা হেনা, অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মো. মাহমুদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে মোহা. সোলাইমান চৌধুরী এবং সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে তানজিল ভূঞা।

ডিন নির্বাচনে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন ২ জন। তারা হলেন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. আমিনুল ইসলাম ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে নির্বাচন করছেন ড. মো. রোকানুজ্জামান।

শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন ২ জন। তারা হলেন, সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন আল-আমিন।

দলের মধ্যে এমন ফাটল জাতীয় নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তারা বলছেন, নিজেদের মধ্যে এমন ফাটল দলের জন্য ভালোকিছু বয়ে আনবে না। নিজেদের মধ্যে এমন চলতে থাকলে বিএনপি-জামায়াত এর সুযোগ নিতে চাইবে। তবে নিজেদের মধ্যে কেন এমনটি হচ্ছে তার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বসা উচিত ছিলো মনে করছেন তারা।

দলের মধ্যে এমন ফাটলের কারণ জানতে চাইলে হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত বর্তমান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বোরাক আলী বলেন, শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে যে ফাটল দেখা দিয়েছে সেটি অবশ্যই দলের জন্য ভালো নয়। সামনে জাতীয় নির্বাচন ফলে আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই জরুরি।

তিনি বলেন দলের নীতিনির্ধারণী, সিনিয়র শিক্ষকদের উচিত ছিলো, যারা হলুদ প্যানেল থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তাদেরকে নিয়ে আলোচনায় বসা। তারা কেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন? তাদের অসন্তুষ্টির জায়গাটি কোথায়? এগুলো জেনে নিরসন করার চেষ্টা করলে এমন অবস্থার অবসান হতো বলে মনে করছেন এ অধ্যাপক।

এ বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে। তিনি বলেন, "একটি পজিশনে প্রার্থী থাকে অনেক, সেখান মনোনয়ন দেয়া হয় একজনকে। অন্যদিকে নিজেকে ওই পদের জন্য যোগ্য মনে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান অনেকেই। আমাদের প্রার্থী নির্বাচনের সময় স্টিয়ারিং কমিটির কোনো সদস্য  ভিন্নমত প্রকাশ করেনি তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সকলেরই আলাদা দল গঠন ও ভিন্ন মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।"

স্টিয়ারিং কমিটির অনেক সদস্য ভিন্নমত প্রকাশ করলেও তাদের মতামতকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে হলুদ প্যানেলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ড. সৈয়দ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, এখানে বিল্ডিং ও অঞ্চল দেখে প্রার্থী বাছাই করা হয়। এখানে নীতি ও আদর্শকে বিবেচনা করা হয় না। দলের আদর্শের মধ্যে থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। দলের স্টিয়ারিং কমিটির উচিত ছিল সাধারণ সদস্যের চাওয়াকে সম্মান করা, মূল্যায়ন করা কিন্তু তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা নির্বাচিত হলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করবো এবং সাধারণ শিক্ষকদের জন্য কাজ করবো।

এদিকে, নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে সাদা প্যানেলের একাংশ। এতে ৫৭ শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে। তাঁরা বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিরোধী দলসমূহের দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও অথরিটি নির্বাচনসহ কোনো ধরনের নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। এ ছাড়া বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহলে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের জন্য বলা হয়েছে। তাই তাঁরাও নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাদা প্যানেলের নেতারা বলছেন, হাইকমান্ড থেকে তাঁরা কোনো চিঠি পাননি। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। একটি পক্ষ তাঁদের পছন্দের প্রার্থী না পাওয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছে।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, অথরিটি ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসন বরাবর আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্বিক দিক বিবেচনায় ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেন। এই সিদ্ধান্তটি কার্যনির্বাহী কমিটির দুজন মেনে নিতে পারেননি। তারা এই তারিখে নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে জানান। আর তারা যে হাইকমান্ডের কথা বলছেন, এরকম কোনো লিখিত ডকুমেন্টস আমরা পায়নি। যদি আসে তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
 
সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া

সেনাকুঞ্জে কুশল বিনিময় করলেন ‍ড. মুহাম্মদ ইউনূস-খালেদা জিয়া